স্বপ্নপূরণ and দেখা হয়েছিল

স্বপ্নপূরণ

মিনারা তাকিয়েছিল চলে যাওয়া ট্রেনটার দিকে। ভাইজান প্রতিমাসের মত ঐ ট্রেনে চড়ে কলকাতা চলে গেল। এ বার ও ওকে নিলো না। প্রতি মাসের শেষে ভাইজান একরাশ খুশী নিয়ে আসে ওখান থেকে। কটা দিন ওরা ভালমন্দ খায় , সারা মাসের সওদা কিনে দিয়ে ওর ভাইজান ফিরে যায় স্বপ্নের শহরে।

মিনারার খুব শখ কলকাতা যাওয়ার, ও স্বপ্ন দেখে কলকাতার। বড় বড় বাড়ি, প্রচুর দোকান, ট্রাম, মেট্রো রেল, ভিক্টোরিয়া, গড়ের মাঠ…… আরো কত কিছু। ছবি দেখে ভাইজানের ফোনে, আর গল্প শোনে। স্বপ্নে কতবার কলকাতা ঘুরে এসেছে ও একাই।

সেবার পূজায় ভাইজান ওর স্বপ্ন পূরণ করতে ওকে নিয়ে গেছিল ওকে নিজের সাথে। কত কি দেখেছিল মিনারা। দুচোখ ভরে স্বপ্নের শহর দেখতে দেখতে কখন হারিয়ে গেছিল টের পায় নি।
সোনাগাছির ঘরে প্রতিনিয়ত স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে টুকরো  হয়, তবু  ও ছোট্ট ঘুলঘুলি দিয়ে এখন স্বপ্নের শহর দেখে প্রতিদিন। যদি কখনো ভাইজান ওকে খুঁজে পায় এই স্বপ্ন নিয়েই মরেও বেঁচে আছে আজ।

দেখা হয়েছিল

পাশের ঘরে ডাক্তারের সাথে অমিতের আলোচনা কানে যেতেই কেঁপে উঠছিল প্রিয়া। ওধারের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে সোজা বাপের বাড়ি চলে এসেছিল । বাবাকে বলেছিল শুধু মেয়ের জন্ম পর্যন্ত আশ্রয় দিতে। তারপর নিজে কিছু একটা করে মেয়েকে বড় করতে পারবে।

আজ তন্নি নাম করা হার্টের ডাক্তার হয়ে প্রিয়ার সব কষ্টের জবাব দিয়েছে। অমিতের সাথে আইনত ছাড়াছাড়ির পর একটা স্কুলে পড়িয়ে তন্নিকে নিজের পরিচয়ে মানুষ করেছিল প্রিয়া। একটু বড় হতেই অমিতের সাথে ছাড়াছাড়ির কারন খুলে বলেছিল মেয়েকে।

আজ পাঁচ নম্বরে অমিত মিত্র নামটা দেখে চমকে উঠেছিল তন্নি।ফেসবুকে কয়েক বছর আগেই খুঁজে পেয়েছিল লোকটাকে। আজ প্রথম সামনাসামনি দেখা। এই লোকটাই একদিন ওকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চায় নি শুধু মেয়ে বলে। আজ নিজের জীবন ভিক্ষা চাইতে এসেছে ওর চেম্বারে। মা এর সাথে ওর বড় করে বাঁধানো ছবিটা ইচ্ছা করেই টেবিলে রেখেছিল তন্নি। সে আজ তনিকা মিত্র নয় ডাক্তার তনিকা বসু, প্রিয়া বসুর সন্তান।

By Debdutta Banerjee