বিবাহ বার্ষিকী
“বিবাহ বার্ষিকী”
বাসবী কয়লা গুড়ো, গোবর মিশিয়ে গুল দিচ্ছিলো। কিছুদিন হলো ওরা এখানে উঠে এসেছে। কপালফেরে একটা পুরোনো ভাঙা চালাঘরের দখল জুটে যায় । মাথার ওপরে একটা কিছু না হলেও ছাদ আছে। লেপ কাঁথা আর বর্ষায় ভেজে না ।
ছেলেদুটো আর গণেশ, চারটে পেট। বাসবী বাবুদের বাড়িতে বাসন মাজে, তবে গণেশের কোন কাজ নেই। রোজ সকালে স্টেশনে কাজ খুঁজতে যায়। গণেশের স্বাস্থ্য মজবুত। আগে একটা স্কুলে দারোয়ানের কাজ করতো। ভাগ্যের দোষে, একদিন স্কুলের মালিকের গাড়ি থেকে চুরি হয়। গাড়িটা বাইরে ছিলো, কিন্তু মালিক মানেন নি। চাকরিটা যায়।
তিন বছরের মধ্যে বাসবী দু’বার মা হয়। আর গণেশ? চোট পাওয়া বাঘ। বিয়ের তারিখে ফিতে, ক্লিপ, মিষ্টিমশলার শিশি একটা কিছু নিয়েই আসতো। পেছনে হুক লাগানো একটা লাল ব্লাউজ আনে একবার। বাসবী তখন নতুন মা, ব্লাউজটা শরীরে ভালো করে বসেছিলো। সাথে বাঘের আদরও ছিলো।
বাসবী ভাবছিলো, আজ ওদের বিয়ের দিন। গণেশের কাছে এখন ঝাপসা তারিখ বা মানুষ। স্নানের পরে, ব্লাউজটা খুঁজে, গায়ে দিয়ে, খুলে ফেলে বাসবী। সামনে পেছনে কেবল খালি শরীরের খাঁচা। সব এখন শুধু স্মৃতি।
সরকারী ক্লিনিকে নিজের বাঘটার দাঁত তুলে গণেশ ফিরলো বেশ রাতে, হাতে দুধের থলি, কিছু ফল। বুকপকেট থেকে টাকা, বাসবীর হাতে।
‘আজ থেকে আমাদের কষ্টের দিন শেষ।’
‘আজকেই কেন ?’
‘এর থেকে ভালো দিন হয় না’। গণেশের চোখে জল।
by Himadri Sekhar Datta